,

আর পোড়াবে না খরতাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃষ্টিহীন বর্ষা ঘাম ঝরানোর পর ভাদ্র মাসের শেষ সময় দেখিয়েছে আষাঢ়-শ্রাবণের কালোমেঘ। বদলে যাওয়া আবহাওয়া গত কয়েকদিন কখনও ঝিরঝিরে, কখনও ভারি বৃষ্টিতে ভিজিয়েছে ধরণী, ভিজিয়েছে মনপ্রাণ। তাতে তীব্র গরমের অতিষ্ঠভাব থেকে মুক্তি মিলেছে মানুষের।

ভাদ্র শেষে, শান্ত-সৌম্য শরতের দ্বিতীয় মাস আশ্বিনের প্রথম দিন রাজধানীতে বৃষ্টিও নেই, নেই তীব্র রোদও। যেন নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন তুলনামূলক আরামেই কাটছে মানুষের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কিছুদিন আবহাওয়া এ রকম আরামদায়কই থাকবে। তীব্র গরম টানা কয়েক মাস যে কষ্ট দিয়েছে মানুষকে, সেটি আর হবে না। চলতি বছরের বাকি সময়টায় ধীরে ধীরে গরম কমতে থাকবে।

শীতের আবহ আসতে আসতে আরও মাস দেড়েক। তবে এই দেড় মাস মানুষকে পোড়াবে না সেভাবে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী চার থেকে পাঁচ দিন বৃষ্টি হলেও পরিমাণে কম হবে। ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব কম। এতে তাপমাত্রা এখনকার তুলনায় কিছুটা বাড়বে। তবে সেই বাড়তি তামপাত্রাও মতো অসহনীয় গরমে কষ্ট দেবে না মানুষকে।’

চলতি বছর বর্ষাকাল গেছে অস্বাভাবিক শুকনো। ৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি, স্বাভাবিকের তুলনায় ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে সূর্যের উত্তাপ গিয়েছিল বেড়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পারদে তামপাত্রা ৩৭ বা ৩৮ বা ৩৯, যাই থাকুক না কেন, তাপের অনুভূতি এর চেয়ে ৫ থেকে ৬ কখনও ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি পাওয়া গেছে। ফলে বর্ষায় এমনকি ভাদ্র মাসের স্বাভাবিক গোমট গরমের সময়েও প্রকৃতি আসলে পুড়িয়েছে গ্রীষ্মের গরমের মতো।

কোনো কোনো দিন ঢাকায় তাপের অনুভূতি দেখা গেছে মরুর শহরগুলোর সমান বা কাছাকাছি।

তবে ভাদ্রের শেষে প্রান্তিকে এসে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝড়েছে ‘আজি ঝরো ঝরো, মুখর বাদর দিনে’র মতো। ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ মানুষের ক্লান্তি কমিয়েছে, এনেছে খানিকটা রোমান্টিকতাও।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধুলাবালি অনেকটাই ধুয়ে মুছে যাওয়ায় শুক্রবার আশ্বিনের প্রথম দিন শুকনো আবহাওয়াতেও মনে হচ্ছে রাস্তাঘাট, গাছগাছালি যেন গোসল করে সতেজ হয়ে এসেছে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতিতে আগামী কয়েকটি সপ্তাহ এ রকম সতেজ ভাবই থাকবে। এ বছরে আর অতিমাত্রার খরতাপ অর্থাৎ অসহনীয় গরম থাকছে না। নভেম্বরের প্রথম থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যাবে। এর আগ পর্যন্ত সহনীয় গরম থাকবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে শুক্রবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তামপাত্রা ৩২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি। চট্টগ্রাম বিভাগে এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি।

সে তুলনায় গরম কিছুটা বেশি রাজশাহী বিভাগে। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি।

উত্তরের আরেক বিভাগ রংপুরে গরম এর চেয়ে কম। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৭০ ডিগ্রি, আর সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৪।

খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও একটু বেশি, ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি। বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি।

তামপাত্রা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। সেখানে সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৫।

তবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পুরো দিনের নয়। দিনের কোনো একটি বিশেষ সময়ের। বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় তামপাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি। তবে আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের হিসাবে এ সময় গরম অনুভূত হচ্ছিল ৩৬ ডিগ্রির সমান, যা গত ১৮ আগস্ট অনুভূত হচ্ছিল ৪৪ ডিগ্রির মতো।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া এবং বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, জুলাই ও আগস্ট অস্বাভাবিক শুকনো থাকলেও সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে বৃষ্টি স্বাভাবিকের কাছাকাছি বা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর